
ড. নিখিল দাশ শিলচর ১৪ মেঃ ২০২৫ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির মিত্র জোট শাসক দলের জন্য নিছক একটি ব্যালট রায় নয়, বরং এটি একটি স্পষ্ট ও কড়া রাজনৈতিক বার্তা, জনগণ আর দুর্নীতি সহ্য করবে না, আর সিন্ডিকেট-নির্ভর নেতাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে না। কাটিগড়ার ও কালাইনে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল বিজেপি ও মিত্র জোটের ভরাডুবি এই কথাটিই ফের প্রমাণ করল।
একাধিক আসনে বিজেপি ও মিত্র জোটে প্রার্থীদের পরাজয় যে শুধু মাত্র বিরোধী দলের সংগঠন বা প্রচারের কারণে নয়, তা একবাক্যে স্বীকার করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। বরং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের পুনর্বার টিকিট দেওয়া এবং দলীয় সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য এসব মিলিয়ে জনতার রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাটিগড়া ও কালাইন অঞ্চলের বহু বিজেপি ও মিত্র জোটের নেতা দীর্ঘদিন ধরে চুনাপাথর, কয়লা, নদীর পাথর, বার্মিজ সুপারি, এমনকি বাংলাদেশে গরু পাচারের মতো বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনিক এবং দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারা সেই অভিযোগগুলি ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন। এবারের নির্বাচনে তাদেরই অনেককে আবারও প্রার্থী করা হয়েছে। জনগণ এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং তারা এই নেতাদের প্রত্যাখ্যান করে সেই রাগ ঝেড়েছে ভোটের বাক্সে।
জনসাধারণের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট, তারা এখন নেতৃত্ব চান, দালালি নয়। তারা এমন একজন জননেতাকে দেখতে চান যিনি সৎ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির, এবং মানুষের পাশে থাকা এক জনসেবক। এক ভোটারের কথায়, আমরা এমন কাউকে চাই না যে দিনের বেলা জনসভায় থাকে আর রাতের অন্ধকারে সিন্ডিকেটের বৈঠকে বসে।
স্থানীয় ভোটারদের একাংশের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর বহু বিজেপি পঞ্চায়েত প্রতিনিধি উন্নয়নের নামে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। রাস্তা নির্মাণ, পানীয়জলের প্রকল্প, স্কুল সংস্কারের মতো বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার হয়নি। অথচ অভিযোগ জমা পড়লেও প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তারা বারবার রক্ষা পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পঞ্চায়েত নির্বাচন বিজেপি ও মিত্র জোটের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’। যদি দল এখনই আত্মসমালোচনায় না নামে, এবং প্রকৃত জননেতাকে টিকিট না দেয়, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেতে হবে। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না আনা গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই নির্বাচনের আরেকটি দিক হলো, মানুষ এখন আগের মতো চুপ করে থাকে না।
তারা সচেতন, সোচ্চার এবং রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখে ভোট দেয়। যে কারণে শুধু দলের নাম, প্রতীকের জোর বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রচার এখন আর যথেষ্ট নয়। স্থানীয় প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, ভাবমূর্তি এবং জনসংযোগই এখন বড় ফ্যাক্টর। এখন বিজেপি ও মিত্র জোটের সামনে একটাই প্রশ্ন তারা কি জনগণের বার্তা বুঝতে পারবে? তারা কি নিজেদের ভেতরের সিন্ডিকেট চক্র ভাঙতে পারবে? যদি না পারে, তাহলে কাটিগড়ার মতো আরও বহু অঞ্চলেই তাদের সামনে আসবে কঠিন সময়।
জনগণ চায় একজন এমন নেতা, যার বিরুদ্ধে নেই কোনো দুর্নীতির অভিযোগ, যিনি রাজনীতি করেন জনগণের স্বার্থে নিজের স্বার্থে নয়। এই বার্তা স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয় বিজেপি ও মিত্র জোটের সেই বার্তা গ্রহণ করে নিজের ভুল শুধরে নিতে পারে কিনা।