
বরাকবাণী প্রতিবেদন মইনুল হক শ্রীভূমি ১২ মেঃ রবিবার সকাল থেকেই করিমগঞ্জ কলেজে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা। প্রখর নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের তৎপরতায় গণনা প্রক্রিয়া চলছে নির্বিঘ্নে। প্রথম দিকে কলেজ চত্বরের বাইরে কিছুটা উত্তেজনার আবহ থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন।
হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকের উপচে পড়া ভিড় ছিলো করিমগঞ্জ কলেজ চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। দুপুর তিনটার পর থেকে একের পর এক আসনের ফলাফল ঘোষিত হতে থাকে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জয়ী প্রার্থীদের সমর্থকদের আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা যায় শহরের বিভিন্ন এলাকায়। বাজি পুড়িয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে অনেক জায়গায় পালিত হয়েছে বিজয়ের উৎসব।
তবে বিজয় যেমন আনন্দ বয়ে আনে, তেমনি পরাজয় বয়ে আনে হতাশা। গণনা কক্ষ থেকে হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে অনেক প্রার্থীকে। বিশেষভাবে নজরে পড়ে টিলাবাড়ি বান্দরকোনা জেলা পরিষদ আসনের নির্দল প্রার্থী তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দিক আহমেদের ঘনিষ্ঠ প্রতিনিধি আব্দুছ্ছত্তারের মুখ ভার করা বিদায়।

যদিও এই আসনের সম্পূর্ণ ফলাফল তখনও ঘোষণা হয়নি, তবে কংগ্রেস প্রার্থী অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম প্রায় দশ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। আব্দুছ্ছত্তারের আগাম প্রস্থান নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র চর্চা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মমতাজ বেগম বলেন, দক্ষিণে সিদ্দেক এখন অতীত। জনগণ হারিকেন প্রতীকে ভোট দেয়নি। তার উচিত এখন রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়া।
একইসঙ্গে এই গণনার চিত্র তুলে ধরছে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের অস্তিত্ব সংকটের বাস্তবতা। জেলার পাঁচটি সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত আসনে কংগ্রেস ভালো ফলাফল করলেও হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে একেবারে খাতা খুলতে পারেনি তারা। বিশ্লেষকদের মতে, হিন্দু ভোটারদের কাছে কংগ্রেসের হিন্দু মুখ’ এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়।
জেলা পরিষদের বিভিন্ন আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন তারা হলেন – কালিগঞ্জে রিজু আহমেদ তালুকদার, টিলাবাড়ি বান্দরকোনায় মমতাজ বেগম, লক্ষীবাজারে নিলুফা ইয়াসমিন, এবং উমরপুর রাজাটিলায় জিল্লুন্নুর। অন্যদিকে শ্রীমন্ত কানিশাইল-বাশাইল আসনে কংগ্রেস প্রার্থী মুস্তাক আহমেদ শুরুতে এগিয়ে থাকলেও নির্দল প্রার্থী আহরার উদ্দিন ক্রমেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে উঠে আসছেন।
এখানে এখনও পাঁচ রাউন্ড গণনা বাকি, ফলে শেষ মুহূর্তে উলট-পালটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সমগ্র জেলায় বিজেপির ব্যাপক সাফল্য চোখে পড়ার মত। একক ভাবে অনেকগুলি জেলা পরিষদ এবং ব্লক পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছে বিজেপি। বেশ কয়েকটি আসনে কংগ্রেসের খাতা পর্যন্ত খুলতে পারেনি বলে জানাচ্ছেন গণনা কক্ষ সংলগ্ন সূত্র।
এই ফলাফলকে ঘিরে জেলা কংগ্রেসে নয়া নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন সময়ে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বে বড়সড় রদবদল অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে বিজেপির জয়জয়কার এবং নির্দলদের ক্রমবর্ধমান উত্থান করিমগঞ্জ জেলার রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।