
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ৮ মেঃ কাছাড় জেলা কংগ্রেসের অন্দরে যে বিপর্যয় চলছে, তা আর চাপা থাকেনি। সোমবার রাতে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন লস্কর এক সাংবাদিক বৈঠকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের খোলামেলা পরাজয়ের জন্য একাধিকার জেলা সভাপতি অভিজিৎ পালের নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন তিনি।
তার মতে, এই নেতৃত্বের গাফিলতি, সিদ্ধান্তহীনতা, এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই কংগ্রেস এখন জনগণের কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়েছে। আজমল হোসেন এক প্রশ্নে বলেন, কাছাড় জেলার ৪৯টি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত ও দুটি জিলা পরিষদ আসনে কেনো কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দিতে পারল না? কেনো বিজেপিকে এমন ‘ওয়াকওভার’ দেওয়া হলো? এর পেছনে কি কোনো রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে?
তিনি আরো দাবি করেন, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা ছিল না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও জেলা নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল এবং রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে তাদের শিথিলতা কংগ্রেসকে বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। ব্লক ও মণ্ডল স্তরের নেতাদের দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের মাধ্যমে কি জেলা নেতৃত্ব দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে? এসব কিছুর পরও কোথায় ছিল দলীয় স্বচ্ছতা? এমন প্রশ্নও তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে, আজমল হোসেন পিএসি কমিটির কাজের বিষয়েও অভিযোগ করেছেন। পিএসি কমিটি তিন দিন ধরে প্রার্থী নির্বাচন করেছে, কিন্তু তাতেও কোন চূড়ান্ত পরিকল্পনা এবং সুসংগঠিত প্রক্রিয়া দেখা যায়নি। এর ফলে দলের পক্ষে গণসংযোগের সময় কমে গেছে, সভা-সমাবেশের সুযোগ পায়নি এবং ফলস্বরূপ দলের প্রার্থীদের জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগও কমে গেছে।
আজমল হোসেন আরও বলেন, একদিকে জেলা সভাপতি কুর্সিতে বসে থাকা, অন্যদিকে তৃণমূলস্তরে দলীয় কর্মীদের মনোবল হারিয়ে যাওয়ার কারণে কংগ্রেস কার্যত সাংগঠনিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কেবল ‘কুর্সি’আঁকড়ে ধরে কাজ চলতে পারে না। জনসংযোগ বাড়ানোর কোনো কৌশল বা উদ্দেশ্যহীনতা ছিল না।
এর ফলে দলের গণসমর্থন ক্রমশ কমে গেছে। কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়েই জেলা কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি অভিজিৎ পাল রয়েছেন চুপ, যা আরো সন্দেহের সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজমল হোসেনের অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তবে কংগ্রেসের কাছাড় জেলা শাখা আগামী দিনে আরও গভীর সংকটের মুখে পড়তে পারে।

আজমল হোসেন সতর্ক করে বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত জেলা কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিজেদের ভুল স্বীকার না করবে, ততদিন দলের এই দুরবস্থা অব্যাহত থাকবে। দলের মিত্র ও সমর্থকদের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা হয়নি। দলের দুর্বলতার দায় কে নেবে? এদিকে, রাজনৈতিক মহলে আজমল হোসেনের বক্তব্য একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, কিছু ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের কারণে কংগ্রেস কি নিজের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করছে? এমন পরিস্থিতিতে জেলা কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আজমল হোসেনের তীব্র আক্রমণের পর যদি জেলা সভাপতি কোনো সদুত্তর না দেন, তবে দলের প্রতি জনগণের আস্থা আরও কমে যাবে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনী ক্ষতিতে পরিণত হতে পারে। এদিকে, জেলার সাধারণ মানুষও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হতাশ।

তাঁদের দাবি, কংগ্রেস যদি জনগণের প্রকৃত চাহিদা পূরণ না করে, তবে ভবিষ্যতে তারা কোনো দলকেই বিশ্বাস করবে না। শুধু সময়ই বলে দেবে, কংগ্রেসের এই সংকটের উত্তর কী এবং দলীয় নেতৃত্ব কীভাবে তা মোকাবেলা করবে।