
তৌফিক আহমেদ তফছির, ঢাকা, ৩ রা মেঃ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধোন্মুখ উস্কানিমূলক মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশের বিডিআর কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল (অব.) এএলএম ফজলুর রহমান। তবে তার এই মন্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই বলেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক সেনা কর্মকর্তার দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত অভিমত।
এটি বাংলাদেশ সরকারের কোনো অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন নয়। সরকার কোনোভাবেই এই ধরনের বক্তব্য সমর্থন করে না বা এর সঙ্গে একমত নয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান দাবি করেন, যদি ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করে, তবে বাংলাদেশের উচিত হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য দখল করে নেওয়া।
সেই লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক উদ্যোগ গড়ে তোলা দরকার। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় ওঠে।
এ অবস্থায় শুক্রবার এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সর্বদা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী এবং এ নীতিতে অটল রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সকল সংশ্লিষ্টকে অনুরোধ করছি, মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের বক্তব্যকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অবস্থান হিসেবে উপস্থাপন বা প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার মন্তব্যের সঙ্গে কোনোভাবেই একমত নয়। বাংলাদেশ সব সময় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং অন্যদের কাছ থেকেও একই প্রত্যাশা করে। বিষয়টি ঘিরে বর্তমানে কূটনৈতিক মহলে কিছুটা চাপা উত্তেজনা দেখা দিলেও সরকার অত্যন্ত সতর্ক এবং দায়িত্বশীলভাবে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পাশাপাশি সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মতামত সরকারের অবস্থানের প্রতিফলন নয়—এই বার্তাও স্পষ্ট করতে চাইছে সরকার। এই বিতর্কের মধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের একটি বড় অংশ এমন মন্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সংবেদনশীল বলে আখ্যা দিয়েছেন।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যদি এমন উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন, তবে তা দেশের ভাবমূর্তির ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে? সরকারের এই দ্রুত ও দৃঢ় অবস্থান স্পষ্টতই বোঝায়, বাংলাদেশ চায় না কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত মন্তব্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করুক।