
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ২রা মেঃ ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছে শ্রীমন্ত কানিশাইল জেলা পরিষদ আসনে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে প্রায় আশি শতাংশ ভোটারই মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন মোড় নিচ্ছে।
কংগ্রেস প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে এখন প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। মুসলিম ভোটারদের এক বড় অংশের মধ্যে একটি বড় অভিযোগ—মুস্তাক প্রকৃতপক্ষে কংগ্রেসের মুখোশে বিজেপির মানুষ। এই ধারণা এখন স্থানীয় সংখ্যালঘু নেতৃত্বদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে নির্দলীয় প্রার্থী আহরারের দিকে স্পষ্টভাবে ভোটের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে।
প্রথমদিকে আহরারের অবস্থান দুর্বল থাকলেও, ‘কাপ প্লেইট’ প্রতীকে মাঠে নামার পর ধীরে ধীরে তিনি জনভিত্তি গড়ে তুলতে থাকেন। গ্রামেগঞ্জে, বাজারে, চায়ের দোকানে—সর্বত্র এখন আলোচনা আহরার আসছেন। দিন যত যাচ্ছে, নির্দলীয় এই প্রার্থীর সমর্থনে মানুষের ঢল নেমে যাচ্ছে। মুসলিম ধর্মীয় গুরুরাও পরোক্ষভাবে তাকে সমর্থন করছেন বলে জানা গেছে, যা নির্দল প্রার্থীর প্রতি সংখ্যালঘু ভোট একত্রীকরণের বড় ইঙ্গিত।
এই রাজনৈতিক নাটকে নতুন মোড় আসে যখন কংগ্রেস প্রার্থী মুস্তাকের বড় ভাই অদুদ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তায় বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন। তিনি সরাসরি বলেন, “মুস্তাক এখন বিজেপির লোকদের সাহায্য নিচ্ছেন। ভোটে জিতলে আবারও বিজেপিতে চলে যাবেন।
অদুদের দাবি, অতীতেও জেতার পর মুস্তাক বিজেপির প্রার্থী আশিস নাথকে সমর্থন করেছিলেন। ভিডিওতে আরও দাবি করা হয়, শ্রীমন্ত কানিশাইল-বাশাইল অঞ্চলে এক বিজেপি নেতার বাড়িতে কংগ্রেস প্রার্থীর গাড়ি রাখা ছিল এবং সেখানেই নাকি গোপনে শলা-পরামর্শ চলছে। অদুদের কথায়, ভোটে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা করে মুস্তাককে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে বিজেপি, যাতে টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনা যায়।
এই প্রসঙ্গে নির্দলীয় প্রার্থী আহরারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু বলতে নারাজ থাকলেও সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনেই জয়ী হচ্ছি। বিজেপি ও তাদের সহযোগীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে, তবে এসব কৌশলে কাজ হবেনা। শ্রীমন্ত কানিশাইল আসনে এবারের ভোট যেন এক রাজনৈতিক থ্রিলারের মতো। কংগ্রেস প্রার্থী নিজ দলেরই ভাইয়ের আক্রমণের মুখে। বিজেপির ছায়া ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনী সমীকরণে। আর নির্দলীয় আহরার, যিনি প্রথমে ছিলেন আলোচনায় বাহিরে, এখন তিনিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রশ্ন উঠছে—এই আসনের আসল রায় কী দেবে জনতা?