
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ২২ এপ্রিল: বরাক উপত্যকায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইউরিয়া সারের অবৈধ পাচার সিন্ডিকেট। বিভাগীয় আধিকারিকদের মদতে সক্রিয় এই চক্র কৃষকদের জন্য বরাদ্দ ইউরিয়া সার গোপনে পাচার করে দিচ্ছে মিজোরাম ও মায়ানমারের দিকে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন বরাকের প্রকৃত কৃষকেরা। সম্প্রতি কাছাড় পুলিশের অভিযানে ধলাই এলাকা থেকে ইউরিয়া ভর্তি দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দুই চালককেও। জব্দ হওয়া ট্রাক দুটিতে মোট ৮০০ বস্তা ইউরিয়া সার ছিল, যার বাজার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাবাড়িঘাটের সাবির আহমেদ লস্কর, সোনাই বাজারের রাকিব হাসান লস্কর ও হান্নান হুসেন লস্কর যারা বর্তমানে পলাতক এবং হাইলাকান্দির কৃষ্ণপুরের কুতুব উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ও নেয়ামতপুরের কবীর উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি এই নতুন সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন। এরা বরাকের কৃষকদের নাম ব্যবহার করে সরকারি বরাদ্দ সার সংগ্রহ করে পাচার করছে প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরাম ও দেশের বাইরে মায়ানমারে। বরাকের কৃষকদের প্রাপ্য সার এইভাবে পাচার হওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে সংকট। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারী মালামাল চুরি, অবৈধ মজুদ ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। অথচ আজও তারা খুলা আকাশের নিচে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে I

স্থানীয় বাসিন্দা মফিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের চোখের সামনে এইরকমভাবে সরকারি সার পাচার হওয়া মানেই দুর্নীতির রমরমা চলছে। আমরা সাধারণ কৃষকরা ন্যায্য দামে সার পাই না, অথচ কিছু লুটেরা সিন্ডিকেট রাতের অন্ধকারে পাচার করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। আরেকজন স্থানীয় কৃষক অনিতা দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইসব দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হলে আগামীতে আরও বড় দুর্নীতি হবে। কৃষকদের পেটে লাথি মেরে যারা নিজেদের পকেট ভরছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ঘটনার পাঁচ দিন অতিক্রম করলেও এই চক্রের মূল মাথারা এখনো পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে হাত মিলিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই অবৈধ বাণিজ্য। আগেও এই চক্র কিছুদিন সক্রিয় ছিল, কিন্তু প্রশাসনিক তৎপরতায় তা বন্ধ হয়।

তবে এবার আবারও চক্রটি নতুন করে সক্রিয় হয়েছে, এবং প্রশাসনের ভেতরের লোকজনের সহায়তায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে কাছাড় জেলা পুলিশ। ধৃত দুই চালকের জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, কবে ধরা পড়বে এই পাচার সিন্ডিকেটের মূল মাথারা? কবে থামবে কৃষকদের হক মারার এই চক্রান্ত?
বরাকের জনসাধারণ এবং কৃষিজীবীরা বিভাগীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জোরালোভাবে দাবি তুলেছেন—এই অবৈধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি বিভাগীয় আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে এবং যদি তাদের গাফিলতি বা যোগসাজশ প্রমাণিত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বরাকের কৃষকরা জিজ্ঞাসা করছে, তাদের প্রাপ্য সার যদি পাচার হয়ে যায়, তবে তারা কিভাবে চাষ করবে? প্রশাসনের কি আদৌ কোন জবাবদিহিতা আছে?