লক্ষীপুরে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন! পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই বিজেপির একতরফা জয়জয়কার?

১১ এপ্রিল, মনোনয়ন জমার শেষ দিনে কাছাড় জেলার লক্ষীপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৌশিক রাই কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেছিলেন, জনতা কংগ্রেসকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। লক্ষীপুরে কংগ্রেসের কোনো অস্তিত্বই নেই। ফলে বিজেপি প্রার্থীরা নির্দ্বিধায় জয়লাভ করবেন। তাঁর এই বক্তব্য যে কেবল কথার কথা ছিল না, তারই যেন জীবন্ত প্রমাণ মিলছে একের পর এক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি প্রার্থীদের জয়ে।

লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে ৪টি জেলা পরিষদ আসন, ৩১টি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত আসন এবং ৩১০টি গাঁও পঞ্চায়েত ওয়ার্ড। বিজেপি লালপানি পঞ্চায়েতটি মিত্র দল অগপ-এর জন্য ছেড়ে দিয়ে বাকি সমস্ত আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে—৪টি জেলা পরিষদ, ৩০টি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত এবং ৩০০টি গাঁও পঞ্চায়েত ওয়ার্ডে।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের চিত্র অনেকটাই মলিন। ৩১টি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ১৩টি আসনে তারা প্রার্থী দিতে পেরেছে। জেলা পরিষদের ৪টি আসনে তারা নাম দিয়েছে বটে, তবে গাঁও পঞ্চায়েতের ৩১০টি ওয়ার্ডে তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো পরিষ্কার তথ্যই প্রকাশ করেনি কংগ্রেস।

মনোনয়ন জমার দিন রাতেই বিজেপির তরফে জানানো হয়, আঞ্চলিক পঞ্চায়েতের ৯টি আসনে তাদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। গাঁও পঞ্চায়েতের ৩০০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১২৩টি ওয়ার্ডে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই।

এখানেই শেষ নয়। বিজেপি দাবি করেছে, লক্ষীনগর-দিলখোশ জেলা পরিষদ আসনে তাদের প্রার্থী সীমা দেব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। আঞ্চলিক পঞ্চায়েতের জয়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫, আর গাঁও পঞ্চায়েতের ওয়ার্ডে জয়ী সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৫০-এরও বেশি।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ এপ্রিল এখনও বাকি। কিন্তু তার আগেই যেভাবে একের পর এক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন, তাতে সচেতন মহলে ছড়িয়েছে গভীর উদ্বেগ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেনএইভাবে যদি সব আসনই নিরবিচারে একদলীয় দখলে চলে যায়, তবে কি ২ মে লক্ষীপুরে আদৌ কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা কেবল বিরোধী শক্তির দুর্বলতার প্রমাণই নয়, এটি গণতন্ত্রের অশোভনীয় ইঙ্গিত। যদি প্রতিযোগিতাই না থাকে, তবে জনগণের রায় কোথায়? লক্ষীপুর এক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ ছিল, আজ সেখানে বিরোধীদের অস্তিত্ব যেন ফিকে হয়ে গেছে। কৌশিক রাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ক্রমেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তবে এই একতরফা জয় গণতন্ত্রের সাফল্য না দুর্দশা—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…