পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা! মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের হুমকির অভিযোগে সরব সভাপতি অভিজিৎ পাল

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের লক্ষীনগর-দিলখোশ জেলা পরিষদ আসন ঘিরে। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী রুজলিনা রংপুই মারকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য প্রবল চাপ দেওয়া হয়, এবং বর্তমানে তিনি নিখোঁজ। এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

একই অভিযোগ উঠেছে দেওয়ান-পালইরবন্দ আসনেও। কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ গোয়ালাকেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন পাল। বর্তমানে তিনি জেলা কংগ্রেস কমিটির আশ্রয়ে রয়েছেন এবং তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি জানান, এইবার কাছাড় জেলা পরিষদের মোট ২৬টি আসনের মধ্যে ২৪টি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। বাকি দুটি আসন—ভুবনেশ্বর-শ্রীকোনা ও শালচাপড়া-মোহনপুর—’ওপেন’ রাখা হয়েছে। যদিও ভুবনেশ্বর-শ্রীকোনা আসনে কংগ্রেসের দুই সদস্য ফরিদা পারভীন লস্কর ও দিলোয়ার লস্কর নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শালচাপড়া-মোহনপুর আসনে কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন নাজরনা বেগম। পাল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা করেন, এই দুটি আসনে যদি কংগ্রেস পরাজিত হয়, তবে আমি ১১ মে-র মধ্যে জেলা কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করব।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন কাটিগড়ার বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদারের। পাল বলেন, বিধায়ক খলিল উদ্দিন দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্য দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত করছে। একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির এ ধরনের আচরণ কখনও কাম্য নয়।

পাল আরও অভিযোগ করেন, গত একবছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করে চলেছেন। সীমা পুনর্নির্ধারণের নামে সময়ক্ষেপণ করে কংগ্রেসকে প্রস্তুতি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা হয়েছে। সরকারের এই কৌশল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি জানান, এবারে জেলা পরিষদ আসনে প্রায় ১৫০ জন এবং এপি সদস্য পদের জন্য প্রায় ৩৫০ জন দাবিদার ছিলেন। ফলে টিকিট বন্টনে কিছু মতবিরোধ দেখা দিলেও, তা দলের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর স্বাভাবিক অঙ্গ বলেই দেখছেন নেতারা।

এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার, শরিফুজ্জামান লস্কর, মিডিয়া ইনচার্জ দেবদীপ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত সরকার, সজল বণিক, আইন কোষের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল হাই লস্কর, সংখ্যালঘু বিভাগের সভাপতি আনছার হোসেন লস্কর, নিশিকান্ত সরকার, কুশল দত্ত, অর্ক সাহা প্রমুখ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রার্থীদের ওপর চাপ, মনোনয়ন প্রত্যাহারের হুমকি এবং দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে প্রকাশ্য মতানৈক্য—সব মিলিয়ে কচারের রাজনৈতিক আবহ এখন অগ্নিগর্ভ। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে এই চিত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্নও তুলে দিচ্ছে।

  • Related Posts

    মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

    শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…