
বিমল চৌধুরী বরাকবাণী প্রতিনিধি শনবিল ১২ এপ্রিল: আনিপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে এবার বাল্য বিবাহ আইনের ছায়া! অভিযোগ উঠেছে, বাল্য বিবাহের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও বিজেপি প্রার্থী রেজওয়ানা বেগমের মনোনয়ন বাতিল করা হয়নি। উলটে রহস্যজনক ভাবে রাতারাতি ‘বৈধ’ ঘোষণাও হয়ে গেল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত আইন এবং ন্যায়বিচারের চরম অবমাননা।
কংগ্রেস প্রার্থী জাসমিনা সুলতানার প্রতিনিধি সামিম আক্তার বলেন, ২০১০ সালে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকলে ১৯৯৩ সালের জন্মতারিখ অনুযায়ী তিনি বিয়ের সময় নাবালিকা ছিলেন—এটা প্রমাণ করার জন্য আর কী দরকার? আমাদের মনোনয়ন গৃহীত হলেও, রেজওয়ানার বাল্য বিবাহের প্রসঙ্গে গা বাঁচানোর চেষ্টা চলেছে দিনভর। এটা চক্রান্ত ছাড়া কিছু না। স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী আলিমুদ্দিন শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা সোজা হিসেব—১৬ বছর বয়সে বিয়ে করলে সেটা বাল্য বিবাহ।
তাহলে এমন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হলো কীভাবে? যদি বিজেপির হাত এতটাই লম্বা হয় যে নির্বাচন কমিশনকেও নির্দেশ দিতে পারে, তাহলে গণতন্ত্র রইল কোথায়? রামকৃষ্ণ নগর বাজারে চায়ের দোকানে বসে থাকা এক স্থানীয় বাসিন্দা রেণু বালা দাস বললেন, এক পক্ষের কাগজে সামান্য ভুল থাকলেও বাতিল হয়, আর অপর পক্ষ স্পষ্ট আইন ভেঙে প্রার্থী থাকে! এ কেমন বিচার? আমরা সাধারণ মানুষ বুঝে গেছি কারা কার পক্ষে কাজ করে।

অন্যদিকে, একই অভিযোগে কাজির বাজার পলডর জিপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী সামিমা আক্তারের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। তার বিপরীতে নির্দল প্রার্থী শিবানী নাথ জয়ী হন। এই বৈপরীত্য নিয়ে সরব সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল। স্থানীয় তরুণ সমাজকর্মী অভিজিৎ রায় বলেন, আমরা চাই একটা স্বচ্ছ নির্বাচন। এখানে দলমত বড় কথা নয়, নিয়ম সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। একজন প্রার্থী বাল্য বিবাহে জড়িয়ে থেকেও বৈধ হয়—এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা বিপজ্জনক বার্তা।
সবমিলিয়ে ভোটের আগে আনিপুরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনার আবহ। রেজওয়ানা বেগমের প্রার্থীত্ব বৈধ ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ও পাড়া-চায়ের আড্ডায় চলছে জোর চর্চা। বিজেপির পক্ষ থেকে যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে স্থানীয় বিধায়কের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। আইন কি সকলের জন্য সমান? নাকি রাজনৈতিক রঙ অনুযায়ী তার ব্যাখ্যা বদলে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আনিপুরের মানুষ।