
বরাকবাণী প্রতিনিধি মইনুল হক শ্রীভূমি ৭ এপ্রিল: অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলকএই অভিযোগ তুলে বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনকে চ্যালেঞ্জ জানাল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড । ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয়েছে মামলার আবেদন। এই প্রসঙ্গে গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। এটি স্বেচ্ছাচারী, বৈষম্যমূলক এবং ভারতের সংবিধানের ২৫ ও ২৬ ধারার পরিপন্থী।
চৌধুরী জানান, নতুন আইন অনুযায়ী ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত মুসলিমদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকারকে খর্ব করে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, এই বিল মুসলিম ধর্মাচরণের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। প্রায় ১৩ ঘণ্টার চর্চার পর লোকসভায় ২৮৮-২৩২ ভোটে এবং রাজ্যসভায় ১২৮-৯৫ ভোটে পাস হয় বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। মধ্যরাত পর্যন্ত চলা বিতর্কের শেষে পাস হওয়া এই বিলকে ‘ঐতিহাসিক সংস্কার’ বলে দাবি করেছে মোদি সরকার। তাদের মতে, এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উপকৃত হবে।
তবে বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস ও মুসলিম সংগঠনগুলি এই বিলকে ‘মুসলিম-বিরোধী’, ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে তীব্র বিরোধিতা করেছে। AIMPLB-এর করা আবেদনের শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যেই ওয়াকফ সংশোধনী আইন সংক্রান্ত একাধিক আবেদন সুপ্রিম কোর্টের তালিকাভুক্ত হয়েছে, এবং AIMPLB-এর আর্জিও সেই তালিকায় স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।আজকের নিলামবাজারের ঘটনায় পুলিশ ও জনতার সংঘর্ষে তীব্র নিন্দা জানিয়ে হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থলে কংগ্রেসের কোনও কর্মী ছিলেন না। এই ঘটনার জন্য দোষীদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ওয়াকফ আইনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা করেছে কংগ্রেস।
হাফিজ রশিদ জানান: সিএএ (CAA) ২০১৯: এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। তথ্যের অধিকার আইন সংশোধনী (২০১৯): ২০০৫ সালের মূল আইনের সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলার রায় এখনও বিচারাধীন। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনী (২০২৪): এই আইন নিয়ে কংগ্রেসের মামলা চলমান। উপাসনালয় আইন (১৯৯১): আইনটির মূল ভাব অক্ষুণ্ণ রাখার দাবি তুলে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে এক নতুন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্ক। AIMPLB এবং কংগ্রেসের পক্ষে এটিকে সংখ্যালঘু অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোন দিক জয়ী হয় সরকারের তথাকথিত সংস্কার, নাকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার?