
ড. নিখিল দাশ শিলচর ৩রা এপ্ৰিল: কাছাড় জেলায় ক্রমবর্ধমানভাবে গজিয়ে উঠছে অসংখ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাদের বেশিরভাগেরই নেই সরকারি স্বীকৃতি বা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন। অভিভাবকদের সহজ-সরল মনোভাবকে পুঁজি করে, কিছু অসাধু ব্যক্তি শিক্ষার নামে ব্যবসা গড়ে তুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে যথাযথ নজরদারির অভাবে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। গুমড়া এলাকার খরচূড়া পেট্রল পাম্পের নিকট অবস্থিত ‘আল ইমরান মন্টেসরি স্কুল’ এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ। অনুমোদনবিহীন এই প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে চললেও, স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের তেমন কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি। ছয় নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত এই স্কুলটি শিক্ষার্থীদের বৈধ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সনদ প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষাদানের চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী বলে মনে হয়। নিম্নমানের পাঠ্যক্রম, অনভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান, এবং প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কারণে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের কষ্টার্জিত অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতও ধোঁয়াশায় পড়ছে। শুধু ‘আল ইমরান মন্টেসরি স্কুল’ নয়, কাছাড় জেলায় এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা অনুমোদন ছাড়াই স্কুল পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতিহীন সনদ প্রদান করে অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করছে। সস্তায় শিক্ষক নিয়োগ, নিম্নমানের অবকাঠামো, এবং শিক্ষার ন্যূনতম মান বজায় বাজায় রাখতে অক্ষম—সবমিলিয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান শিক্ষাব্যবস্থার মানকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন কেন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? শিক্ষা বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুততার সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পাশাপাশি, অভিভাবকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। সন্তানকে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর আগে প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন, বৈধতা, এবং শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কাছাড় জেলায় অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুখোশ উন্মোচন করতে পিছপা হবো না। পর্যায়ক্রমে এই ধরনের ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার না হয়। শিক্ষার নামে এই বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রশাসন, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদ—সবারই এগিয়ে আসা দরকার। সচেতনতা এবং সক্রিয় উদ্যোগই পারে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে। তাই সকলের প্রতি আহ্বান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈধতা যাচাই করুন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করুন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। আমাদের পরবর্তী প্রতিবেদনের জন্য সঙ্গে থাকুন।