ড. নিখিল দাশ শিলচর ২রা এপ্ৰিল: বরাক উপত্যকায় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নামে চলছে এক বিশাল প্রতারণার চক্র। রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ আসার পর একের পর এক প্রতারক পুলিশের জালে ধরা পড়ছে। সম্প্রতি বদরপুর পুলিশ আগরতলা থেকে আটক করেছে রাজদীপ রায় নামে এক কুখ্যাত প্রতারককে। এর আগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল মোহাম্মদ শাকির, মোহাম্মদ জাবির, শাকিল আহমেদ, মুজাক্কির হুসেন মুন্নার মতো অনলাইন ট্রেডিং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের। এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অনেক নিরীহ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে টাকা খোয়ানো বিনিয়োগকারীরা পুলিশের দ্বারস্থ হলে তদন্তে উঠে আসে এই চক্রের ভয়াবহ রূপ। অথচ এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এই প্রতারণার পেছনের মূল কারিগররা। এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে আরও কিছু নাম, যারা এই প্রতারণা চক্রের মাষ্টার মাইন্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশের তালিকায় রয়েছে মালুয়ার রশিদ আহমেদ, আছিমগঞ্জের মুস্তাফিজুর রহমান, বটরশির টেট শিক্ষক সুফিয়ান চৌধুরী । এছাড়াও বাখরশালের দালাল হিসেবে পরিচিত ইফজাল হুসেন, জাফর, হিসাম উদ্দীন, বদরপুরের জাকার, আসফাক, জাওয়ারুল, তামিম, আবু জহর, আছিমগঞ্জ গেট মসজিদের সেক্রেটারি আফতাব উদ্দীনসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বদরপুর পুলিশ ইতোমধ্যে এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করেছে। এই চক্র সাধারণত শেয়ার বাজারে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তারা প্রচারণা চালায়। প্রথম দিকে কিছু মুনাফা দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর একসময় সমস্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। প্রশাসন এই চক্র নির্মূল করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। পুলিশের একাধিক অভিযান এবং গ্রেপ্তারের ফলে অনেক প্রতারক ধরা পড়লেও, মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষকে এই ধরনের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। বিনিয়োগের আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা এবং অবৈধ অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ট্রেডিং প্রতারণার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই বরাক উপত্যকার কুখ্যাত প্রতারকরা আগেভাগেই গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে তাদের ছায়াসঙ্গী দালালরা এখনও এলাকায় সক্রিয় থাকলেও, তাদের বিলাসবহুল কালো গাড়িগুলো যেন হঠাৎ করেই জাতীয় সড়ক থেকে উধাও হয়ে গেছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, প্রতারণা চক্রের অন্যতম শীর্ষ নাম শাকির ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাম নিজেদের সম্পদ রক্ষার তৎপরতায় ব্যস্ত। হিসামের কালো রঙের বিলাসবহুল টাটা হারিয়ার গাড়িটি বর্তমানে তার শ্বশুরবাড়ির কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আবার, গোপন সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই গাড়িটি আগরতলার কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এদিকে, প্রতারক মাষ্টার মাইন্ডরা যেমন নিজেদের আত্মগোপন নিশ্চিত করেছে, ঠিক তেমনই তাদের দালালরাও বিনিয়োগকারীদের নজর এড়িয়ে কৌশলে অবৈধ সম্পত্তি ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রার চিহ্ন মুছে ফেলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিশ্বস্ত মহলের খবর অনুযায়ী, শাকির, রশিদ, মুস্তাফিজ এবং রাজদীপ গ্যাংয়ের দালালরা বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং তারা কোনো এক আইনজীবীর পরামর্শে আত্মসমর্পণের জন্য পরিকল্পনা করছে।
বদরপুর বুন্দাশীল গ্রামের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ট্রেডিংয়ের নামে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে এক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো এক অকার্যকর চেক ধরিয়ে দিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ওই নেতা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই নেতা তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশাল মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যখন বিনিয়োগকারী তার টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন, তখন একের পর এক আশ্বাসবাণী শোনানো হয় তাকে। অবশেষে ৩০ লক্ষ টাকার একটি চেক ধরিয়ে দিয়ে নেতা বেপাত্তা হয়ে যান। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার শিকার ওই বিনিয়োগকারী তার হাতে থাকা ৩০ লক্ষ টাকার চেকটি খুব শীঘ্রই বরাকবাণী সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে চলেছেন। এতে করে রাজনৈতিক এই নেতার মুখোশ খুলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন যে, এ ধরনের আর্থিক প্রতারণার বিরুদ্ধে পুলিশ যেন ‘অ্যাকশন মোডে’নামে। কেননা, এই ধরনের প্রতারক চক্রের কারণে সাধারণ জনগণ তাদের সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছু অর্থনীতিবিদের মতে, বড় অংকের টাকা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ার ফলে বাজারে চরম আর্থিক ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। রাজ্যের সাধারণ ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ চরম আর্থিক মান্দাতায় ভুগছেন। এই প্রতারণা কাণ্ড নিয়ে সামনে আরও তথ্য উঠে আসতে পারে। বরাকবাণী এই বিষয়ে নজর রাখছে এবং সত্য উদ্ঘাটনের জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।