
বিভাগীয় আধিকারিক ও ঠিকাদারের যোগসাজশে জলসম্পদ বিভাগের দুর্নীতি! কাছাড়ে জলসম্পদ বিভাগের বদলির নির্দেশ উপেক্ষিত, কার্যনির্বাহী অভিযন্তার রহস্যময় ভূমিকায়
ড. নিখিল দাশ: বরাকবাণী,শিলচর,১ ফেব্রুয়ারি: কাছাড় জেলার জলসম্পদ বিভাগে বড় অঙ্কের আর্থিক মঞ্জুরি হওয়ার পর থেকেই এক অদ্ভুত চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই বরাদ্দের পরপরই শিলচর জলসম্পদ বিভাগের উচ্চপদস্থ কয়েকজন আধিকারিক ও অন্যান্য কর্মচারীরা গায়েব হয়ে গেছেন। জানা গেছে, তাঁরা রাজ্যের রাজধানীতে গিয়ে আস্তানা গেড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—সরকারি দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ফেলে তাঁরা সেখানে কী করছেন? এমন অভিযোগ রয়েছে যে, জলসম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় লিপ্ত। লক্ষণীয় বিষয় হলো, যে মুহূর্তে সরকার বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করল, তার পরপরই এই কর্মকর্তাদের হঠাৎ রাজধানীতে আস্তানা গেড়ে বসেছেন এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিগত সময়েও জলসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া, নিম্নমানের নির্মাণকাজ, এবং প্রকল্প অসম্পূর্ণ রেখে টাকা লোপাট করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে।


এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাঁরা কি এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন, নাকি চোখ বন্ধ করে রাখবেন? সাধারণ মানুষের করের টাকায় গড়ে ওঠা প্রকল্প যদি দুর্নীতির কবলে পড়ে, তাহলে উন্নয়নের নামে প্রতারণার শিকার হবে জনগণই। তাই বিষয়টির স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত সত্য সামনে আসে এবং দোষীরা শাস্তি পায়। অন্যথায়, সরকারি দপ্তরগুলোতে দুর্নীতির এই রীতি অব্যাহত থাকবে, আর জনগণের ভোগান্তি কখনো শেষ হবে না।
কাছাড়ের জলসম্পদ বিভাগ এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ভাস্কর রায়, বর্তমান কর্মচারী দেবাশীষ আচার্য এবং আবুল নামের এক ব্যক্তির যোগসাজশে চলছে নানা অনিয়ম। সূত্রের দাবি, শিলচর জলসম্পদ বিভাগের কর্মী দেবাশীষ আচার্য নিয়মিত মাইনে পেলেও অধিকাংশ সময় তিনি গৌহাটিতে কাটান। অথচ, অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রভাব ব্যাপক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যা ঠিক করে দেয় কারা কাজ পাবে আর কারা পাবে না। বিশেষ করে, জিও ব্যাগ ও পারকুপাইনের বরাত কাদের দেওয়া হবে, তা তার ইশারাতেই নির্ধারিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে, জলসম্পদ বিভাগের প্রকল্পগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ঠিকাদারি কাজে স্বচ্ছতা নেই, বরাদ্দ অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে না এবং সাধারণ মানুষ এই দুর্নীতির কুফল ভোগ করছে। প্রশ্ন হলো, কেন প্রশাসন এতদিন এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি? কেন একজন সরকারি কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে দফতর ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেট চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন? সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট বন্ধ হয় এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সুষ্ঠুভাবে হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি জল সম্পদ বিভাগের মুখ্য কার্যালয় থেকে কাছাড় জেলার পাঁচজন কর্মীর বদলির নির্দেশ জারি করা হয়। একই সঙ্গে কয়েকজন নতুন কর্মীকে নিযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ জারির ২১ দিন পার হলেও বদলির আদেশ কার্যকর হয়নি। জানা গেছে, কিন্তু রহস্য জনক কারণে জলসম্পদ বিভাগের কার্যনির্বাহী অভিযন্তা জামান কাউকে রিলিজ দিচ্ছেন না এবং কাউকে জয়েনিং ও দিচ্ছেননা। প্রাপ্ত খবর অনুসারে জয়নিং এর জন্য এসে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করলেও কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না কেন জামান। সরকারি নির্দেশকে পাত্তা না দিয়ে বর্তমানে তিনি গোহাটিতে অবস্থানরত রয়েছেন বলে সূত্রে প্রকাশ। নিয়ম অনুযায়ী, বদলির আদেশ জারির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু জামানের এমন আচরণে বদলি হওয়া কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। নতুন নিযুক্ত কর্মীরাও বারবার অফিসের দ্বারস্থ হলেও কেউ তাদের কথা শুনছে না। ফলে পুরো বিভাগের কাজকর্মেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারি নির্দেশ মানতে কার্যনির্বাহী অভিযন্তা অনীহা দেখাচ্ছেন কেন? তার এহেন ভূমিকায় প্রশাসনও নীরব কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ভুক্তভোগী কর্মী ও সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে জলসম্পদ বিভাগের অভ্যন্তরে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভাগীয় নির্দেশ অনুসারে আবু মোঃ সুফিয়ান লস্কর কে শ্রীভূমি জেলায় বদলি করা হয়েছে। একইভাবে আব্দুল মান্নান লস্কর কে শ্রীভূমি জেলায়, আবুল হোসেন লস্করকে হাইলাকান্দি জেলায়, বাহারুল ইসলাম লস্করকে কাটিগড়া ওয়াটার ডিভিশনে, ঋষিকেশ কোটাকে হাইলাকান্দি জেলায়,ইহেলার হুসেন চৌধুরীকে কাটিগড়া ওয়াটার ডিভিশনে, তানান্তরিত করার নির্দেশ এসেছে। কিন্তু সবাইকে আঁকড়ে ধরে সরকারি পদবীর ফায়দা তুলছেন কার্যনির্বাহী অভিযন্তা।
সূত্রে প্রকাশ সম্প্রতি নাবার্ড ও এসডিআর এফ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিল মঞ্জুর হয়েছে। এবার সেই বিলের অর্থ নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা কতিপয় বিভাগীয় আঞ্চলিক ও ঠিকাদার। শুধু বিল মঞ্জুর হলেই হল ।বর্ষা এলেও কাজের অগ্রগতি নিয়ে ফেলদুল নেই জেলা জনসম্পদ বিভাগের। প্রাপ্ত সূত্র অনুসারে এখনও বেশিরভাগ ডাইকের কাজ অসম্পূর্ণ। অধিকাংশ অকেজো সুইচগেট গুলি সারিয়ে ওঠা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বর্ষায় জেলার পরিস্থিতি কি হবে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।