
শহরের যানজট সমস্যা নিয়ে সরব হলো শিলচর জেলা কংগ্রেস, জেলা আয়ুক্তকে স্মারকলিপি প্রদান, শহরের যানজট সমস্যা, প্রশাসনিক উদাসীনতা নাকি অব্যবস্থাপনা
বরাকবাণী প্রতিবেদন,শিলচর,১ ফেব্রুয়ারি: শিলচর শহরের যানজট সমস্যা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনের যাতায়াত এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। অথচ প্রশাসন নির্বিকার। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাফিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। শনিবার শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটির এক প্রতিনিধি দল এই সমস্যা নিয়ে জেলা শাসক মৃদুল যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে তাঁরা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার বেহাল দশা তুলে ধরে দ্রুত সমাধানের আবেদন জানিয়েছেন। শহরের প্রধান সড়কগুলো—অম্বিকাপট্টি, হাসপাতাল রোড, সেন্ট্রাল রোড, প্রেমতলা, রাঙ্গিরখাড়ি, সদরঘাট, মেডিকেল কলেজ রোড, শ্যামাপ্রসাদ রোডে—প্রতিদিন ভয়াবহ যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। রাস্তায় যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং, হকারদের দখলদারি, ট্রাফিক পুলিশের শিথিলতা এবং অব্যবস্থাপনা শহরের যান চলাচলকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে স্কুল ও অফিস সময়ের ব্যস্ততম মুহূর্তে যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা বারবার বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে তারা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। কোথাও ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কোথাও রাস্তার অবৈধ দখলদারি সরানো হয় না। অটোরিকশা ও টেম্পোগুলোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, রাস্তার সংকীর্ণতা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

শিলচর শহরের যানজট সমস্যা প্রতিদিনই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ রোডে যানজটের কারণে রোগীদের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল এই সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন এবং প্রশাসনের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, একজন রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছাতে যে সময় লাগার কথা পাঁচ মিনিট, সেটাই এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টায় পরিণত হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে অনেক রোগী পথেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল সরাসরি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, "এই শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মানুষ বাঁচবে না মরবে, তা যেন ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীদের এক একটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান, অথচ যানজটে আটকে পড়ে অনেকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন। এটা কি উন্নয়ন?" শহরের ট্রাফিক সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও এর সমাধানে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। শহরের অনেক পথচারী এবং চালকরাও এই সমস্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে, আর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও বেশ কয়েকজন রোগী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নগরবাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতির সমাধান কী? প্রশাসন কি সত্যিই মানুষের জীবনের মূল্য বোঝে? নাকি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে সাধারণ মানুষকে এই দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে? শহরের জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখতে এবং রোগীদের জীবন বাঁচাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নাহলে এই যানজট সমস্যা একসময় আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
শহরের যানজট সমস্যা এখন সাধারণ নাগরিকদের জন্য এক নিত্যদিনের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামী মানুষ সবাই এই সমস্যার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে, পরীক্ষার দিন তো আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, শহরের বুকে একের পর এক গড়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল, শপিং মল ও হোটেল, কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফলে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীরা পর্যন্ত রাস্তার একাংশ দখল করে রাখা যানবাহনের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শহরের এই যানজট সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা চোখে পড়ছে না। যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও রাস্তা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন পার্কিং স্পট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু, ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ। এই সমস্যা শুধুমাত্র নাগরিকদের নয়, এটি প্রশাসনের ব্যর্থতারই প্রতিফলন। জনগণ তাদের করের অর্থ দিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে শহর এক বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং, এপিসিসির সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ, সূর্যকান্ত সরকার, বড়খোলার বিধায়ক মিসবাউল ইসলাম লষ্কর, সীমান্ত ভট্টাচার্য এবং রণধীর দেবনাথ সহ অন্যান্যরা এদিন যানজট সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে শুধু রাজনীতিকদের বিবৃতি বা প্রশাসনের আশ্বাস দিয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শহরের যানজট পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে, যা শহরের সাধারণ নাগরিকদের জীবনে আরও দুর্ভোগ ডেকে আনবে। প্রশাসন যদি এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে জনসাধারণকে রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে হতে পারে।