বাংলাদেশের অবৈধ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঊনকোটি কংগ্রেসের বিক্ষোভ প্রদর্শন।

বরাকবাণী প্রতিবেদনঃপরিতোষ পালঃ ধর্মনগরঃ২৭ জানুয়ারিঃ

কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ের বাঁধ খুব শীঘ্রই সংস্কার কিংবা পুননির্মানের দাবীতে এবং দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশে বাংলাদেশ যে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে তারই প্রতিবাদে ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কৈলাসহর-কুমারঘাট রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। কৈলাসহরের বিমানবন্দর সংলগ্ন কৈলাসহর-কুমারঘাট রাস্তা অবরোধ করে শত শত দলীয় কর্মী সমর্থকরা এই রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছে। রাস্তা অবরোধের নেতৃত্বে রয়েছেন বিধায়ক বিরজিত সিনহা, ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য, যুব কংগ্রেসের ঊনকোটি জেলা কমিটির সভাপতি দেবাংশু দাস  কংগ্রেস নেতা চন্দ্রশেখর সিনহা, নরসিংহ দাস, যুব নেতা দ্বীপ সিনহা সহ আরও অন্যান্য নেতৃত্বরা। শনিবার সকাল দশটা থেকে এই রাস্তা অবরোধ শুরু হয়েছে।

 এই অবরোধের ফলে রাস্তার দুইপাশে শত শত গাড়ি আটকে পড়েছে এবং নিত্য যাত্রী সহ পথচারীরা নাজেহাল। রাস্তা অবরোধস্থলে কৈলাসহরের মহকুমা পুলিশ অফিসার জয়ন্ত কর্মকার এবং কৈলাসহর ওসি সুকান্ত সেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ, টি.এস.আর ও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মজুত রয়েছে। অবরোধস্থলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক বিরজিত সিনহা জানান যে, কৈলাসহর মহকুমায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। খুব শীঘ্রই এই বাঁধ সংস্কার কিংবা পুননির্মাণ করা না হলে আসন্ন বর্ষাকালে গোটা কৈলাসহর জলের নীচে তলিয়ে যাবে। তাছাড়া দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশে বাংলাদেশ সরকার যেভানে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করছে তারও তীব্র সমালোচনা করেন। বিধায়ক আরও জানান যে, আজ রাতেই উনি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে ফোন করে বলবেন যে, খুব শীঘ্রই কৈলাসহরে এসে মনু নদীর পাড়ের বাঁধ পরিদর্শন করার জন্য এবং বাংলাদেশ সরকারের অবৈধ বাঁধ দেখে যাবার জন্য। উল্লেখ্য, কিছু দিন পূর্বে কৈলাসহরের মাগুরুলী গ্রামে ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে যেভাবে বাংলাদেশের নাগরিকরা বি.এস.এফ জওয়ানদের আক্রমণ করেছে এবং বি.এস.এফ জওয়ানদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেবার চেস্টা করেছিলো তারও তীব্র নিন্দা জানান বিধায়ক বিরজিত সিনহা। সকাল সাড়ে দশটায় রাস্তা অবরোধ শুরু করে বেলা বারোটা নাগাদ রাস্তা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিলো। পরবর্তী সময়ে দুপুর একটায় দ্বিতীয় ধাপে আবারও আরেকটি আন্দোলন করেছিলো ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস। কৈলাসহরের রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে লং মার্চ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ঊনকোটি জেলা কংগ্রেস। পঁচিশ জানুয়ারি শনিবার দুপুর একটায় কৈলাসহরের টিলাবাজার এলাকা থেকে দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের উদ্দেশ্যে লং মার্চ করেছে কংগ্রেস দলের কর্মী সমর্থকরা। টিলাবাজার এলাকা থেকে দেবীপুর এলাকার ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। যদিও কংগ্রেস কর্মীরা দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে পৌঁছার এক কিলোমিটার আগেই পুলিশ কংগ্রেস কর্মীদের আটকে দেয়। পুলিশ সীমান্তের এক কিলোমিটার দূরে দুইটি অস্থায়ী ব্যরিকেড বানিয়েছিলো। প্রথম ব্যরিকেড ভেংগে এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ব্যরিকেড ভাংগতে পারেনি কংগ্রেস কর্মীরা। দ্বিতীয় ব্যরিকেডে আটকে পড়ে এবং বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস কর্মীরা। দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে লং মার্চ করে কংগ্রেস কর্মীরা। লং মার্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিধায়ক বিরজিত সিনহা, ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য, ঊনকোটি জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি দেবাংশু দাস, কংগ্রেস নেতা চন্দ্রশেখর সিনহা, নর সিংহ দাস, যুবনেতা দ্বীপ সিনহা, জুবের আহমেদ, সানু চৌধুরী সহ আরও অনেকে। লং মার্চে এক হাজারেরও বেশী দলীয় কর্মী সমর্থকরা অংশগ্রহণ করেছিলো বলে জেলা কংগ্রেস থেকে দাবী করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুননির্মাণ সহ বাংলাদেশ সরকারের অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণে কংগ্রেস দল ধারাবাহিক ভাবে কৈলাসহরে আন্দোলন শুরু করায় গোটা কৈলাসহরবাসীরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন। লং মার্চ শেষে ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান জানান যে, দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের সরকার অবৈধভাবে যে বাঁধ নির্মাণ করেছে তারজন্য বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা এবং নিন্দা করেন। কৈলাসহর শহর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে তিনশো মিটার দূরে ল্যান্ড কাস্টমস অফিস নির্মান করার সময় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা বাঁধা দেওয়ায় আজ অব্দি স্থায়ী ল্যান্ড কাস্টমস অফিস নির্মান করা যায় নি। অথচ দেবীপুর এলাকায় জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ সরকার বাঁধ নির্মাণ করার সময় বি.এস.এফ বাঁধা দেয়নি এবং স্থানীয় প্রশাসনের নজরেও দেয়নি। আসলে বি.এস.এফের অদূরদর্শীতার কারনেই বাংলাদেশ সরকার এমন কাজ করতে পেরেছে। বি.এস.এফ সম্পুর্ন রুপে ব্যর্থ বলে জানান মো: বদরুজ্জামান। অন্যদিকে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এও জানান যে, কৈলাসহরের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর পাড়ের বাঁধের অবস্থা ভয়াবহ। খুব শীঘ্রই সংস্কার কিংবা পুননির্মানের কাজ শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবী জানান। যদি আগামী পনেরো দিনের মধ্যে সরকার বাঁধের কাজের জন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেয় তাহলে জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কৈলাসহরে আটচল্লিশ ঘন্টার বনধ ডাকা হবে বলেও জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান হুশিয়ারি দিয়েছেন।

  • Related Posts

    মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

    শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…