
প্রতারক শাকির,রাজদীপ ও তাদের দালাল বাহিনী, ৬০ দিনে ডবল লাভের ফাঁদে লক্ষ লক্ষ টাকা, বরাকে হাজার কোটি টাকার প্রতারণা!
প্রতারকের বিলাসবহুল জীবনের আড়ালে সাধারণ মানুষের সর্বনাশ
ড. নিখিল দাশঃ বরাকবাণী,শিলচরঃ২২ জানুয়ারিঃ সম্প্রতি শ্রীভূমি জেলায় অনলাইন স্টক মার্কেটের বিনিয়োগের নামে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই প্রতারণা চক্রে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শাকির, রাজদীপ, রশিদ, সুফিয়ান, মুস্তাফিজুর প্রমুখ। বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, দামি গাড়ি-বাড়ি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে, তারা বিনিয়োগের প্রলোভনে ফাঁদ পাতত। এই প্রতারণা চক্র শুধুমাত্র শ্রীভূমি নয়, বরাক উপত্যকার অন্যান্য জেলাগুলিতেও সক্রিয় ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, শাকির ও তার গ্যাং স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের নামে টাকা সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করত। তবে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা। শাকির ও তার সহযোগীরা শুধু বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাদের বিলাসী জীবনযাত্রার মাধ্যমে আরও লোককে আকৃষ্ট করত। দামি গাড়ি উপহার দিয়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করত।
টাকা দ্বিগুণ করার প্রলোভন এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা। মানুষের সহজ সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতারকরা একটি বড় চক্র গড়ে তুলেছিল। জানা গেছে, অনলাইনে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের নামে এই চক্রটি বহু মানুষের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনার সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো সাধারণ মানুষের সরলতাকে এভাবে ব্যবহার করা। বহু পরিবার হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হারিয়েছে এই প্রতারণার শিকার হয়ে। চক্রের সদস্যরা নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দিয়ে আরও মানুষকে আকৃষ্ট করত এবং ফাঁদে ফেলত। অভিযোগ উঠেছে, রাজদীপ ও শাকির রশিদ তাঁদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ও আকাশছোঁয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রলোভিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতারকরা দাবি করত যে তাঁদের কাছে টাকা জমা রাখলে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে ৩০ শতাংশ রিটার্নসহ সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এই অবাস্তব প্রলোভন দিয়ে বহু মানুষকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল।
প্রতারকদের কৌশল ছিল খুবই সূক্ষ্ম। তাঁরা চারটি ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে সেইসব কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগের জাল বিছিয়েছিল। প্রতারণার টাকা দিয়ে শুধু বিলাসবহুল গাড়ি ও সম্পত্তি কেনা হয়নি, অসমের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এমনকি, এই টাকার মাধ্যমেই তাঁরা নিজেদের সামাজিক অবস্থান এমনভাবে উপস্থাপন করেছিল, যাতে সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রতি সহজেই বিশ্বাস স্থাপন করে। প্রতারকরা মানুষের স্বপ্ন ও সঞ্চয়ের অপব্যবহার করে তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। রাজদীপ ও শাকিরের মতো লোকেরা তাঁদের বিলাসী জীবনযাত্রার আড়ালে যে আর্থিক কেলেঙ্কারি করেছে,ভুয়ো ট্রেডিং প্রতারক ও তাদের দালাল বাহিনীরা।
সম্প্রতি অসম জুড়ে একাধিক ভুয়ো অনলাইন ট্রেডিং সংস্থার প্রতারণা চক্র সামনে আসায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই চক্রের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, “টাকা দ্বিগুণ করার প্রলোভনে পা দিয়ে যেন সাধারণ মানুষ এই ধরনের প্রতারণার শিকার না হন।” পুলিশ ইতিমধ্যেই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী, রাজ্যের প্রতারণা চক্রের মূল হোতাদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ভুয়ো অনলাইন ট্রেডিং সংস্থা সেবি বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও নিয়মকানুন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মানুষকে প্রতারণা করছে। ফলস্বরূপ, হাজার হাজার মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হচ্ছেন।