
বরাকবাণী প্রতিনিধিঃপরিতোষ পালঃ ধর্মনগরঃ১৭জানুয়ারিঃ বাংলাদেশে ইউনুস সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারত বিরোধী যেসব কার্যকলাপ করে যাচ্ছে এর প্রভাব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে দেখা গেলেও ত্রিপুরা কিংবা ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরে তা দেখা যায় নি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ইউনুস সরকার কৈলাসহর সীমান্তে হিংসামূলক এবং জঘন্য কাজ শুরু করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোটা কৈলাসহরকে জলে ডুবিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার। গত দুই দিন পূর্বে কৈলাসহরের বিধায়ক বিরজিত সিনহা বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর নজরে নেওয়ার জন্য বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ সরকার কৈলাসহরের রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাটাতারের পাশে এমনকি জিরো পয়েন্টের একেবারে পাশে সম্পুর্ন অনৈতিক ভাবে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে। অনৈতিক ভাবে উঁচু বাঁধ নির্মাণের ফলে আগামী বর্ষাকালে গোটা কৈলাসহর জলের নীচে চলে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে যদি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে আগামী দিনে কৈলাসহরে ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে বলে বিধায়ক বিরজিত সিনহা বিধানসভা অধিবেশনে দাবী করেছিলেন। বিধায়ক বিরজিত সিনহার এই বক্তব্যের সাথে সাথেই রাজ্যের মন্ত্রী সুধাংশু দাশও এই দাবীকে সমর্থন করেছিলেন। সেদিন বিধায়ক বিরজিত সিনহার পাশাপাশি মন্ত্রী সুধাংশু দাশও মূখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেছিলেন যে, কিছুদিন পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছিলো এবং খুব শীঘ্রই আবারও গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করা হবে এবং স্থানীয় প্রশাসন দিয়েও খোঁজ খবর নেওয়া হবে। পনেরো জানুয়ারি বিধানসভা অধিবেশনে এই বিষয়টি আলোচনার পর মূখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে দুইদিন পর সতেরো জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা, অতিরিক্ত জেলাশাসক অর্ঘ সাহা, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান মো: বদরুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক মতিরঞ্জন দেববর্মা সহ প্রশাসনিক একটি দল রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুর এলাকার ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে যায়। উনারা ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৮৪৯নম্বর পিলারের গেইটের ভিতরে জিরো পয়েন্টে গিয়ে বাংলাদেশের বাঁধ সরজমিনে দেখেন। বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ দেখে সবাই অবাক এবং বিস্মিত হয়ে যান। পরিদর্শন শেষে ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, বাংলাদেশ সরকার সম্পুর্ন অন্যায় ভাবে বাঁধ তৈরি করছে। শুধু তাইনয়, বাংলাদেশ সরকার জিরো পয়েন্টের একেবারে পাশে বাঁধ তৈরি করছে। এটা কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ সরকার করতে পারে না। তাছাড়া, যেভাবে উঁচু করে এবং চওড়া করে বাঁধ নির্মাণ করছে সেটা এভাবে করতে পারে না। এর নির্দিষ্ট গাইড লাইন রয়েছে এবং তা মেনেই করা উচিত ছিলো। তাছাড়া জেলাশাসক আরও জানান যে, বাংলাদেশ সরকার যে জায়গায় বাঁধা তৈরি করছে সেটা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার অন্তর্ভুক্ত আলীনগর এলাকা। বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা বাঁধ তৈরি করবে। ইতিমধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ সরকার। বাকী অংশে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশ সরকার কিছু কিছু জায়গায় বাঁধের উপর পীচ রাস্তাও করে ফেলেছে। এবং কিছু কিছু জায়গায় বাঁধের পাশে উঁচু লম্বা পাকা ওয়ালও তৈরি করছে বাংলাদেশ সরকার।সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো, বাংলাদেশ সরকার এই বাঁধের কাজ দিনের বেলায় না করে রাতের বেলায় কাজ করছে। এই বাঁধ নির্মাণের পূর্বে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সাথে কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা করেনি বলেও জানান জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা। তবে জেলাশাসক এও জানান যে, বাংলাদেশ সরকার যে জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করছে তার ঠিক উল্টো দিকে ভারতেরও বাঁধ রয়েছে। ভারতের বাঁধ জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো মিটার দূরে রয়েছে। তবে, এই বাঁধ অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই বাঁধ সংস্কার কিংবা নির্মাণ করতে হবে এবং সেই বাঁধ বাংলাদেশের বাঁধ থেকে আরও উঁচু এবং আরও বেশী মজবুত করে করতে হবে বলে জানান জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা।