
বরাকবাণী প্রতিবেদন, গুয়াহাটি, ১৫ জানুয়ারি: অসমের উন্নতি হচ্ছে জেট গতিতে। তাই এখন রাজ্যের যুবসমাজ বড় মাপের স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। তবে চারদিকে এই উন্নয়নের জোয়ার দেখে অনেকেই নিরাশ। এই পরিস্থিতিতেও তারা সরকারের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত। একথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এক বিশেষ ফেসবুক লাইভে এসে মুখ্যমন্ত্রী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট, অ্যাডভান্টেজ অসম ২.০, এডিআরই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা, নিউইয়র্ক টাইমসের সেরা পর্যটন স্থলের তালিকায় অসমের স্বীকৃতি, নতুন বছরে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসা, উমরাংশুর কয়লা খনির আটকে থাকা শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার, অবৈধ খননের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ, শিলচর এবং গুয়াহাটির মধ্যে এক্সপ্রেস হাইওয়ে গড়ে তোলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে তাঁর কথায়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে অসমে সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন, তবে কখনও রাজ্যের এমন সুন্দর পরিবেশ দেখেননি। তিনি বলেন, ‘রাজ্য বা জাতীয় স্তরের নয়, গোটা পৃথিবীর প্রথমসারির পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস বলছে পর্যটনের জন্য এখন অসম সেরা। তারা গোটা বিশ্বের পর্যটকদের পছন্দের জায়গার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এবং এতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে অসম। তাদের চোখে ভারতের সেরা রাজ্য হচ্ছে অসম। নিউইয়র্ক টাইমস অসমের চড়াইদেও মৈদাম, কামাক্ষা, কাজিরাঙ্গা, মানস সহ রাজ্যের চা বাগানের কথা উল্লেখ করেছে। তারা এমনটা বলেছে কারণ তাদের নিরিখে এই রাজ্যের পরিস্থিতি এখন উন্নত। আমাদের এমনই একটা উজ্জ্বল ইতিহাস ছিল যা একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। গত তিন বছরে একের পর এক কাজ করে আমরা সেই হারানো দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। গতবছর প্রধানমন্ত্রী নিজে অসমে একরাত কাটিয়েছেন এবং এর প্রভাব পড়েছে পর্যটকদের মনে। এবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন গোটা বিশ্বের পর্যটকদের এখানে আসছে উদ্বুদ্ধ করবে। এতে রাজ্যের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, অ্যাডভান্টেজ অসমকে সফল করা এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য এবং এই উদ্দেশ্যে তিনি একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কংগ্রেস দলের এক নেতা বলেছেন এটা শুধু বাণিজ্য মেলা হবে, বিনিয়োগ আসবে না। আমি তাদের বলতে চাই, একবার জাগিরোড যান, দেখবেন ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আমি গত কয়েকদিন ভুটান, মুম্বই এবং দিল্লিতে অ্যাডভান্টেজ অসমের প্রচার করেছি। সৌদি আরব, ইটালি, জাপান সহ ১২৭টি দেশের প্রতিনিধিরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। মহিন্দ্রা, টাটার মত আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের লোকেরা আমাকে সময় দিয়েছেন। তারা অসমের উন্নতির গল্প শুনেছেন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করেছেন। এটা অবশ্যই সুখবর। আমরা এডিআরই পরীক্ষার ফলাফল ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা মার্চের প্রথমে ঘোষণা করব। একই সঙ্গে ফের এই পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। ইতিমধ্যে ৫৫০০ শিক্ষকের নিযুক্তি দেওয়া হচ্ছে এবং আরও ৪ হাজারের নিযুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব থেমে থাকবো না, আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য স্থানে বসাবো। যারা সরকারি চাকরি পাবে না, তাদের জন্য বেসরকারিস্তরে চাকরির ব্যবস্থা হবে। এছাড়া যারা আত্মনির্ভর হতে চাইছে, তাদেরও সাহায্য করছে সরকার। আমরা আশাবাদী এবং চাই যুবসমাজ স্বপ্ন দেখুক। আমাদের এই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে, এখন যুবসমাজ বড় মাপের স্বপ্ন দেখতে শিখেছে, কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে অসমের উন্নতি হচ্ছে। অনেকেই নিরাশবাদী এবং তারা আমাদের দোষ খুঁজতেই ব্যস্ত। তবে আমরা আশাবাদী এবং বড় মাপের স্বপ্ন দেখছি।’
গুয়াহাটিতে একের পর এক ফ্লাইওভার হচ্ছে এবং এনিয়ে অনেকেই সরকারের সমালোচনা করেছেন। এই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ফ্লাইওভার বানানো খারাপ হত, তাহলে মুম্বই, দিল্লি ইত্যাদি শহরে কেন একের পর এক ফ্লাইওভার হচ্ছে? আমরা রাজ্যের পরিকাঠামোকে ক্রমশ উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। কাজিরাঙ্গায় এলিভেটেড করিডোর হয়েছে, গুয়াহাটিতে বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইওভার হয়েছে, একের পর এক সেতু নির্মাণ হচ্ছে এবং আগামীতে শিলচর ও গুয়াহাটির মধ্যে এক্সপ্রেস হাইওয়ে গড়ে তোলা হবে। সাধারণ মানুষ এসব দেখে খুশি এবং আমরা চাই তারা যেন আমাদের পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে আমরা নতুন নতুন প্রকল্প চালু করতে পারব। আমাদের স্বপ্ন, অসম একদিন আকাশ ছোঁবে। আমরা দেশের সেরা রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবো। নিন্দুকরা যতই নিন্দা করুক, আমাদের কি এসে যায়। আগামীতে বিহু আসছে এবং আমি প্রত্যেক ব্যক্তিকে বলবো আপনারা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, জানুয়ারির প্রথম এক সপ্তাহ অসমে দুর্ঘটনার জন্য মন খারাপ হয়ে যেত। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক কম হয়েছে। যুব সমাজের প্রতি তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজের পরিবারকে ভালবাসুন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে মদ খেয়ে গাড়ি চালাবেন না। আপনাদের মৃত্যু পরিবারকে গভীর শোকে ফেলে দেয়। একজন যুবকের মৃত্যু হলেও আমার কষ্ট হয়। আমরা একদিন এমন একটা পরিবেশ গড়ে তুলবো যেখানে কেউ দুর্ঘটনায় মারা যাবে না।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবার প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনি ডিব্রুগড়ে পতাকা উত্তোলন করবেন। তার ইচ্ছে ডিব্রুগড়কে অসমের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।