
বরাকবাণী প্রতিবেদনঃগন্ডাছড়া,ত্রিপুরা,১৩জানুয়ারিঃ হিন্দু সনাতনী ধর্মে মকর সংক্রান্তি এক বিশেষ পুণ্যতিথি, যা পৌষ মাসের শেষ দিনে পালিত হয়। এই দিন ভোরে স্নান ও পূর্বপুরুষদের প্রতি পুণ্য জল প্রদান করে নিজেদের পুণ্যলাভে মগ্ন হন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা। দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মতোই ত্রিপুরার ডুম্বুর মেলায়ও একদা হাজার হাজার পুণ্যার্থী একত্রিত হয়ে গঙ্গাসাগর অবগাহনের মতো পুণ্যস্নান করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঐতিহ্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
গন্ডাছড়া মহকুমার বঙ্করঘাট নৌকা ঘাট থেকে পুণ্যার্থীরা নৌকায় চেপে ডুম্বুর মেলায় যাত্রা করেন। তবে এবার নৌকা ঘাট প্রায় ফাঁকা, হাতে গোনা কয়েকটি নৌকা অপেক্ষা করছে কিছু সংখ্যক পুণ্যার্থীর জন্য। সোমবার দুপুরে মাত্র কয়েকটি নৌকা পুণ্যার্থীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এবছর মাথাপিছু ভাড়া ১৫০ টাকা ধার্য করা হলেও লোকসমাগমের অভাব স্পষ্ট।
মকর সংক্রান্তির আরেক ঐতিহ্য বুড়ির ঘরের দেখা মিলছে না আগের মতো। এক সময় গ্রামবাংলার প্রতিটি কোণে খর, বন এবং ছন দিয়ে তৈরি বুড়ির ঘর দেখা যেত। ভোরে পুণ্য স্নানের পর আবালবৃদ্ধবনিতা দল বুড়ির ঘরে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতেন। কিন্তু এখন এসব কেবল স্মৃতির অংশ।
গন্ডাছড়ার সরমা এলাকার সম্পদ মণ্ডল পাড়ায় পাওয়া একটি আধুনিক বুড়ির ঘর এই ঐতিহ্যের ক্ষীণ চিহ্ন বহন করছে। দামি স্ক্রিন দিয়ে বেড়া এবং কলাপাতা দিয়ে ছাওয়া এই ঘরে কচিকাচারা জানিয়েছে যে সোমবার রাতে রুটি-মাংস রান্নার আয়োজন হয়েছে এবং সারা রাত চলবে সাউন্ড সিস্টেমে আনন্দ উৎসব। মঙ্গলবার ভোরে পুণ্যস্নানের পর বুড়ির ঘরে আগুন জ্বালানো হবে।
একসময় বারো মাসে তেরো পার্বণ পালনে মেতে উঠত হিন্দু সমাজ। কিন্তু আধুনিকতা ও সামাজিক পরিবর্তনের ছোঁয়ায় অনেক ঐতিহ্যের রূপ বদলে যাচ্ছে। মকর সংক্রান্তি যেমন পুণ্যের উৎসব, তেমনি এটি ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতীক। কিন্তু ডুম্বুর মেলা বা বুড়ির ঘরের মতো প্রতীকগুলো আজ বিলুপ্তির পথে।