
বরাকবাণী প্রতিবেদন নিলামবাজার ৮ মে: বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে গ্রেফতার হলো টিলাবাড়ির বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও স্বঘোষিত শাসক ঘনিষ্ঠ পাতিনেতা সুলাল মোহাম্মদ খান। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দকৃত গরিবের চাল আত্মসাৎ করে আসছিল এই ব্যক্তি।
প্রশাসনের দীর্ঘ নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলা এই অপকর্মের অবসান ঘটল মঙ্গলবার রাতে, যখন পাথারকান্দি থানার পুলিশ নিলামবাজার থানার সহযোগিতায় তাকে টিলাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। প্রতিদিনকার সংগ্রামে জর্জরিত সাধারণ মানুষদের জন্য ভারত সরকার যে ‘খাদ্য সুরক্ষা’ প্রকল্প চালু করেছে, তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল দরিদ্র জনগণের মুখে খাবার তুলে দেওয়া।
কিন্তু টিলাবাড়ির সুলাল মোহাম্মদ খান সেই ব্যবস্থাকেই উপহাসে পরিণত করেছিলেন। সরকারি বরাদ্দের বিনামূল্যের চাল নিয়মিতভাবে আত্মসাৎ করে তিনি বিপুল পরিমাণে লাভবান হন—এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সুলাল ছিলেন টিলাবাড়ি এলাকার একটি ন্যায্য মূল্য দোকানের মালিক। সেই অবস্থানের অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাল বিতরণে কারচুপি করেন। ভুক্তভোগী হিতাধিকারীরা চাল না পেয়ে বারবার প্রতিবাদ করলেও তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বছরের পর বছর এই অনিয়ম চলতে থাকলেও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ছিল। বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তাতে কোনো প্রতিকার মেলেনি। অবশেষে সম্প্রতি জনরোষ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে পুলিশ তদন্তে নামে। গতকাল গভীর রাতে এক বিশেষ অভিযানে সুলালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার সকালে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সুলাল মোহাম্মদ খান নিজেকে দীর্ঘদিন ধরেই শাসক দলের স্থানীয় ‘পাতিনেতা’ হিসেবে প্রচার করে এসেছেন। সামাজিক মাধ্যমে একাধিক ছবি ও বক্তব্যে তিনি নিজেকে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়, সিদ্দেক আহমেদসহ অনেক নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেন।
তার এসব প্রচার ছিল মূলত নিজেকে ‘অচ্ছেদ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় তিনি বেছে বেছে প্রশাসনিক আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, এমনকি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল, যারা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তাদের ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া।
গ্রেফতারের সময় সুলাল দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে কংগ্রেস ষড়যন্ত্র করেছে। এই বক্তব্যকে হাস্যকর বলেই ব্যাখ্যা করছেন এলাকাবাসী। তাদের মতে, যিনি বছরের পর বছর গরিব মানুষের চাল আত্মসাৎ করেছেন, তার মুখে এই ধরনের রাজনৈতিক অভিযোগ নিজের দোষ আড়াল করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। বরং অনেকে বলছেন, এতদিন ধরে যে প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা দেখা গিয়েছিল, তার পেছনে আদৌ কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছিল কিনা, সেটাই এখন তদন্তের বিষয় হওয়া উচিত।
সুলালের গ্রেফতারিতে টিলাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় স্বস্তির হাওয়া বইছে। এক হিতাধিকারী বলেন, আমরা চাল নিতে গেলে উলটে আমাদেরই অপমান করা হতো। এতদিন পর বিচার দেখে শান্তি লাগছে। সচেতন নাগরিক মহল মনে করছে, শুধু সুলাল নয়, যারা তার সঙ্গে যুক্ত ছিল বা যারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নয়তো এই ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
একটি সভ্য সমাজে সবচেয়ে দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করাই প্রশাসনের প্রথম কাজ। সুলাল মোহাম্মদ খানের মতো ব্যক্তিরা যখন ক্ষমতা ও প্রভাবের অপব্যবহার করে সেই অধিকার হরণ করে, তখন কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে।