
বরাকবাণী প্রতিবেদন বড়খলা, ৮ মেঃ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো জনমুখী সরকারি প্রকল্প নিয়ে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কাছাড় জেলার বড়খলা উজান গ্রামে। এক গৃহবধূর দায়ের করা অভিযোগ ঘিরে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, ঘর বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের একাধিক কর্তাব্যক্তি।
অভিযোগকারী মাসুমা খানম বড়ভূঁইয়ার দাবি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর স্বামী সামসুল হক বড়ভূঁয়ার নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে একটি ঘর বরাদ্দ হয়। বরাদ্দের পর তাদের ঘরের একটিও ইট ওঠেনি, অথচ সরকারের তরফ থেকে বরাদ্দ কিস্তির মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা ৩২,৫০০ টাকা ও দ্বিতীয় কিস্তির ৪৮,৭৫০ টাকা— মোট ৮১,২৫০ টাকা— ব্যাংকে আসার কথা থাকলেও তা তাঁদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়নি। পরবর্তীতে তদন্ত করে তিনি জানতে পারেন, এই টাকা জাল কাগজপত্র বানিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় তিনি বড়খলা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে চেছরি জিপির গ্রাম পঞ্চায়েত আরএস পপ্পি পাল, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সিদ্দেক রেহেমান বড়ভূঁইয়া এবং জিপি সেক্রেটারি ফরিজ উদ্দিন লস্করকে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাসুমা খানম জানান, একাধিকবার জিপি মেম্বার ও অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে টাকা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, এখনও সরকারি বরাদ্দ আসেনি।
কিন্তু পরে মাসুমার দাবি, তাঁকে ঘর দেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করা হয়। শুধু তাই নয়, মাসুমা মনে করেন, বিগত বছরের বন্যা ত্রাণ বণ্টন নিয়ে স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে তাঁর বচসা হওয়ার পর থেকে প্রতিহিংসাবশতই এই প্রতারণা করা হয়েছে।
তিনি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক এবং প্রকৃত প্রাপকদের তাদের প্রাপ্য যেন সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে গ্রামে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই মনে করছেন, যেসব সরকারি প্রকল্প সাধারণ মানুষের অধিকার এবং প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে,
সেগুলি যদি এমন দুর্নীতির কবলে পড়ে, তবে প্রশাসনের উপর আস্থা থাকবে না। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শুরু হলে আরও অনেক অনিয়মের পর্দাফাঁস হতে পারে। প্রশাসনের কাছে জনসাধারণের প্রশ্ন, জনকল্যাণে তৈরি প্রকল্প যদি দুর্নীতির বলি হয়, তবে সাধারণ মানুষের আশ্রয় কোথায়?