
পরিতোষ পাল বরাকবাণী প্রতিনিধি ধর্মনগর ৫ মেঃ সরকারি টাকায় প্রকাশ্যে দুর্নীতি করছে ঠিকাদার। বাঁধ সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে দপ্তরের কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দেবার আগেই বাঁধ আবার ভেঙ্গে পড়ছে। কাজের গুনগত মান নিয়ে গ্রামবাসীরা সরব হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক সহ প্রকৌশলীরা টাকার বিনিময়ে চুপ হয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গ্রামবাসীরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। ঘটনা কৈলাসহরের সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। উল্লেখ্য, ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরের চন্ডীপুর ব্লকের অধীনস্হ সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত। এই সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন, চার, পাঁচ নং ওয়ার্ডের পঁচানব্বই শতাংশ মানুষই কৃষিজীবী।
এই অঞ্চলের ধান সহ শাক-সব্জি কৈলাসহর মহকুমার প্রায় অর্ধেক যোগান দিয়ে থাকে। এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় বড় পুকুরও রয়েছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটা অংশ শাক-সব্জির পাশাপাশি মাছ চাষও করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, বিগত দশ পনেরো বছর ধরে সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন, চার ও পাঁচ নং ওয়ার্ড এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকাটি। এর মূল কারন হলো তিন নং এবং চার নং ওয়ার্ড এলাকায় সমরু ছড়া রয়েছে এবং সমরু ছড়ার পাড়ে বাঁধ রয়েছে।

সমরু ছড়ার পাড়ে যে বাঁধ রয়েছে, সেই বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এবং বাঁধের উচ্চতা না বাড়ানোর ফলে সামান্য বৃষ্টির জলেই সমরু ছড়া ভর্তি হয়ে গিয়ে বাঁধের উপর দিয়ে জল এসে পুরো এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। তাতে লক্ষ লক্ষ টাকার ধান সহ শাক-সব্জি নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। এরই পাশাপাশি, এই কৃত্রিম বন্যার ফলে এলাকার বড় বড় পুকুর গুলোর মাছ হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকরা। এই এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বসবাস রয়েছে।
গ্রামবাসীরা সমরু ছড়া পাড়ের বাঁধটির উচ্চতা বাড়ানোর জন্য এবং বাঁধের সংস্কার করে দেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সহ সংশ্লিষ্ট বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরকে জানানোর পর অবশেষে প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো সহ বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজের শুরুতেই কাজ গুনগত মান নিয়ে গ্রামবাসীরা সরব হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের আধিকারিক সহ প্রকৌশলীদের মোটা অংকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার তার মরজিমাফিক কাজ করে চলছে।

যেখানে বাঁধের উচ্চতা প্রায় এক মিটার বাড়ানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার উচ্চতা বাড়াচ্ছেন না। বাঁধে মাটি ফেলার পর ভারী মেশিন দিয়ে ভাইব্রেটিং করে মাটি চাপা দিয়ে বাঁধের দুপাশে বিলেতি ঘাসের ছাপটা লাগানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার মাটি ফেলে কোনো ধরনের ভাইব্রেটিং না করে বাঁধের পাশের জমির ঘাসের ছাপটা বসিয়ে দিয়েছে। যা একেবারেই অবৈধ কাজ করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বলে জানান গ্রামবাসীরা। বাঁধের কাজের প্রায় আশি শতাংশ কাজ প্রায় দুমাস পূর্বেই সমাপ্ত হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক কালে সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধের দুপাশের ঘাসের ছাপটা উঠে যায় এবং বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফাটল ধরেছে। কিছু কিছু জায়গায় সমরু ছড়ার পাশে বাঁশের পেলাসেটিং দিয়ে বাঁধ সংস্কার করা হলেও সেই পেলাসেটিং ভেংগে গেছে দুমাস আগেই। আবার, কিছু কিছু জায়গায় সমরু ছড়ায় বোল্ডার ফেলে বাঁধ সংস্কার করার কথা থাকলেও বাস্তবে কোথাও বোল্ডার ফেলা হয়নি।
চৌঠা মে রোববার বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এলাকায় বাঁধের অবস্থা পরিদর্শন করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাঁধের করুন অবস্থার কথা জানালে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার গ্রামবাসীদের জানায়, যে জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে সেই জায়গায় আবার মাটি ফেলা হবে এবং যে যে জায়গায় ঘাসের ছাপটা উঠে গেছে সেই জায়গায় আবার ঘাসের ছাপটা লাগানো হবে। অর্থাৎ এক কাজ দুবার করা হবে।

অবিলম্বে দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা সমরুপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সমরু ছড়ার পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ তদারকি যদি না করেন তাহলে আসন্ন বর্ষায় গোটা এলাকা আবারও জলমগ্ন হবে বলে জানান গ্রামবাসীরা। এভাবে সরকারি টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করে প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীরা খুব শীঘ্রই স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে বলে গ্রামবাসীরা জানান।